বিষয়টি নিয়ে অনেক মতামত রয়েছে, কিছু ভুল কিছু শুদ্ধ ।
আমি নিজে শুরু করার আগে প্রায় ২ বছর ব্যাপারটা নিয়ে কিছু কিছু বিচ্ছিন্ন চিন্তা করেছি, খোজ নিয়েছি । কিছু খামার ভিজিটের জন্য চেস্টা করেছি ।
এখানে আমার অভিজ্ঞতা আর মতামত তুলে ধরার চেস্টা করবো – লেখাটি লম্বা হয়ে যাবে, ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি । তবে, পড়লে হয়ত আপনাদের অনেক সময় নস্ট হওয়া থেকে বেচে যাবে ।
পেশায় আমি একজন অয়েবসাইট ডিজাইনার ও ডেভেলপার,
এছাড়াও কম্পিউটার সম্পর্কিত আরো কিছু কাজ করি – সবই অনলাইন ভিত্তিক ।
২০০১ থেকে ঢাকায় ছিলাম, যেহেতু অনলাইন এই সব কাজ করা হয়ে যায়, এজন্য গত এক বছর হল বগুড়ায় নিজেদের গ্রামে চলে এসেছি । অনলাইন এর কাজের পাশাপাশি, শখের বসে ছাগল পালন এর প্লান করেছিলাম ।
ঢাকায় থাকা অবস্থায়, আমার বাসা ছিল মোহাম্মদপুরে সাদিক এগ্রোর পাশেই, চোখের সামনে তাদের বেড়ে ওঠা দেখেছি । এছাড়া আরো কিছু ফার্ম ঘুরে দেখেছিলাম ।
প্রথমে আমি আমাদের এলাকার হাট গুলোতে ঘুরেছি ৬ মাস, বোঝার চেস্টা করেছি – ছাগলের দাম কেমন, চাহিদা কিসের বেশি, কারা ক্রেতা । যা জানলামঃ
১/ হাটের প্রধান ক্রেতা দালাল, তারা ৪০০০-৮০০০ এর মাঝে ছাগল কেনে, এর বেশি কিনলে দাম বেশি পরে যায় মাংসের হিসাবে ।
২/ পাঠি ছাগলের দাম – ২৫০০-৫০০০, গড় ৩৫০০-৪০০০
৩/ এদের সাথে দামাদামি করে ওঠা খুব কঠিন – গালাগালি করে, মুখ খারাপ করে আপনাকে চটিয়ে দেবে, আর ঝগড়া লাগলে পুরো হাট তাদের ক্ষমতায় ।
দেশী ছাগল বেশি ওঠে, ভাল জাতের ছাগল হাটে ওঠে না ।
৪/ সমস্যা / রুগ্ন ছাড়া ভাল ছাগল কম ওঠে
তবে, অই ৬ মাসে আমি ছাগলের দামের একটা আইডিয়া পেয়েছিলাম – এ ব্যাপারে আমি একেবারেই অশিক্ষিত ছিলাম । আমার কোন ধারনাই ছিলনা, এ ধারনা পরে আমাকে সাহায্য করেছে । একজন খুব বড় ব্যাবসায়ী বলেছিলান, নিজের ব্যাবসার সব কাজ নিজে না করলেও, ভালোভাবে জানতে হবে ।
এরপর প্লান করলাম, যেহেতু ছাগল পালনের ‘প’ বুঝিনা, দেশী জাতের ছাগল কিনে আগে কিছুদিন শিখি । আমার বাজেট ছিল মাত্র ১০০০০/
এটী একটি ভুল সিদ্ধান্ত ছিল । পাশের থানার হাটে বেড়াতে গিয়ে হুট করে একটা ছাগল ৬০০০/= পছন্দ হয়ে গেল। সে কাউকে গায়ে হাতই দিতে দিচ্ছে না । খুবই চঞ্চল ( আজকেও আমাকে নাজেহাল করেছে) । গাভিন, কালো চকচকে গায়ের রঙ, কিনে ফেললাম । সাথে দালাল আমাকে আরেকটা ছাগল ২৭০০/= তে দিয়ে দিল, এটাও ভুল ছিল । ছাগলটা অসুস্থ্য ছিল – ঠান্ডা লেগেছিল । ১১ দিনেও ভাল না হওয়ায় ওটা জবাই করে ফেলতে হয়েছিল । আসলে জবাই করার দরকার ছিল না । এখন হলে এমন ছাগল সুস্থ্য করে ফেলতে পারতাম ।
কি কি ভুল ছিল এখানেঃ
১/ ৬০০০+২৭০০=৯৭০০/= দিয়ে দেশী ছাগল না কিনে, একটা বড় ক্রস গাভিন ছাগল কেনা উচিত ছিল ।
২/ হাট থেকে কেনা উচিত হয়নি ।
নিয়ে আসার পর – নভেম্বর মাসের শীতের কারনে, চৌকির উপর রেখেছিলাম – খড় বিছিয়ে ।
এরপর শুরু হল – ছাগলের অসুস্থ্য হওয়া । ঠান্ডা লাগে একটার, ভাল হয় – অন্যটার তখন আবার পাতলা পায়খানা হয় । লেগেই থাকে, এখানে ভুল ছিলঃ কৃমির ঔষধ না দেয়া । বড়ছাগলের নাম দিয়েছিলাম খনা ( খনার বচন থেকে নেয়া ), সে ১০ দিন পরেই ২ টা পাঠি বাচ্চা জন্ম দিল ।
একটা লাল রঙয়ের, লালি আরেকটা সাদা গোলাপি ছোপ ছোপ – গোলাপি । গোলাপি জন্ম থেকেই দুর্বল ছিল ।
খনার ফুল পড়তে দেরি হয়েছিল – প্রানি সম্পদ অফিস থেকে প্রেসক্রিপশন ঔষধ দিল । বাচ্চারা দুধ পাচ্ছিল না । ফিডারে করে গরুর দুধ পানি মিশিয়ে হাল্কা জ্বাল দিয়ে খাওয়ানর চেস্টা করলাম । লালি,কেড়ে এনিয়ে খায় কিন্তু গোলাপি মুখেও তোলে না ।
২ মাস বয়সে গোলাপি রাত ১০টায় ডেকে উঠলো, গিয়ে দেখি – জোরে জোরে নিস্বাস নিচ্ছে । দিনে বেশি খেয়ে ফেলে পেট ফুলে গেছে, সিরিঞ্জ দিয়ে গ্যাস বের করে দিয়েও, বাচাতে পারলাম না । এই শিক্ষা পরে কাজে লেগেছে, এমন সমস্যায় আরেকটি ছাগল মরতে বসেছিল – সিরিঞ্জ ফুটিয়ে গ্যাস এর করায় বেচে গেছে ।
এভাবে প্রথম ৪ মাস যুদ্ধ চলল, পাতলা পায়খানা, পেট খারাপ এইসব নিয়ে । মাঝে আরো ২টা দেশী বাচ্চা কিনেছিলাম ৩ মাস বয়সী – টোনা আর টুনি । এটাও ভুল সিদ্ধান্ত ছিল । উচিত ছিল গাভিন বড় ছাগল কেনা ।
এখন সব গুলো ছাগল শুধু খাচ্ছে – হিট আসতে হয়ত আরো ২/৩ অপেক্ষা করতে হবে । এখন ছাগল গুলো সুস্থ্য আছে । বড় ছাগল কিনলে, তারাতারি হিটে আসত, বাচ্চা পেতাম তারাতারি – উতসাহ বাড়ত ।
মাঝে ডিসেম্বর এ একটা ক্রস ছাগি কিনলাম, যেটা এই কমাসে বেশ বড় হয়েছে – নাম টুসি । ডাকলে কাছে আসে, সাড়া দেয় । এইটা সঠিক ছিল । তবে এ ৮ মাসে সবচেয়ে বড় ভুল ছিল – নিয়মিত কৃমির ঔষধ না খাওয়ানো ।
লালি, বেটে হয়ে গেছে । জন্মের সময় যেটুকু লম্বা ছিল এখনো তাই আছে, শুধু পেট বড় হয়েছে । তবে গত ২ মাস নিয়মিত কৃমির ডোজ দিয়েছি, মানে ৩ মাস আগে দিয়েছিলাম । এরপর গত ২৩ তারিখে আবার দিয়েছি ।
একটা ছাগল, এত দুর্বল হয়ে গিয়েছিল যে বসলে আর উঠতে পারত না । এটা হয়েছিল কৃমির কারনে, রক্ত স্বল্পতায় দুর্বল হয়ে গিয়েছিল । এখন সে অনেক ভাল ।
বর্তমানে – ১ বিঘা জমিকে ৩ ভাগ করে এক ভাগে পাকচুং লাগিয়েছি ২ মাস আগে । বাকি এক অংশে আলফা আলফা ঘাস লাগাবো । বাকি অংশে ইপিল ইপিল লাগানর ইচ্ছা ।
সামনের আশ্বিন মাসে বড় সাইজ এর গাভিন ক্রস কিনবো ১/২ টা করে । আর যত দ্রুত সম্ভব একটা পাঠা কিনবো । খনা গত ৬ মাসেও হিটে আসেনি – পাঠা থাকলে আশা করি এই সমস্যা সমাধান হবে ।
এখন পর্যন্ত – টাকার অংকে, আমি লসে আছি । নিজের পরিশ্রম আর সময় ব্যায় বাদেই ।
নিজের ভুলগুলো বিবেচনা করে আমার মতে উচিত কাজ হলঃ
১/ শুরুতে ঘাস লাগানো, এর ২ মাস পর ছাগল কেনা ।
২/ বড় জাতের ক্রস গাভিন ছাগল কেনা উচিত । এক বিয়ান হলে ভাল হয় ।
৩/ ৫/৬ মাস বয়সী একটা পাঠা কেনা উচিত ।
৪/ তবে শুরুতে আপনি খাসিও কিনতে পারেন – অবশ্যই ক্রস ।
৫/ ব্লাক বেঙ্গল সেরা জাত, দেশী মুরগিও সেরা স্বাদে । কিন্তু খামার করলে সবাই কক / ব্রয়লার করে কারন এতে ল্ভ বেশি স্বল্প সময়ে । এখানে অনেক বিখ্যাত মানুশ অনেক ভিন্নমত পোষন করতে পারে। তবে যারা সত্যিই খামারি – যেমন হাসিব ভাই ( উনার বোয়ার আছে, এসআর ফার্ম), ওসমান গণি ভাই ( নড়াইল নাজ ফার্ম – ১৭ বিঘার প্রজেক্ট ১০০+ ছাগল আছে, ২০১৪ থেকে) উনারাও কিন্তু ক্রস / অরিজিনাল ব্লাড লাইনের ছাগল পালছেন । উনাদের বাজেট/ বিনিয়োগ বেশি ।
গণি ভাই উনাকে নিয়ে করা ভিডিওতে সোজা বলেছেন – বিটাল ক্রস পালন করতে ।
ব্লাক বেঙ্গল সেরা সন্দেহ নাই, তবে সেটা ১/২ টা বাড়িতে ছেড়ে পালার জন্য । খামার করে লাভ করতে হলে, দানাদার খাবার খাইয়ে, বছর শেষে খাবার খরচই উঠবে না ।
৬/ শুরুতে ৫/৬ টা দিয়ে শুরু করা উচিত আপনার যত টাকাই বিনিয়োগের সামর্থ থাকুক না কেন ।
৭/ আপনার যদি ঈদের দিনে বেড়ানো বাদ দিতে না পারেন, গার্ল ফ্রেন্ড ডাকলে যেতেই হবে মনোভাব নিয়ে বসে থাকেন অথবা ছাগলের প্রসাবের গন্ধ সহ্য না হয় -আপনার এই পেশায় আসা উচিত হবে না ।
৮/ প্রথম ২ বছরে লাভ করতে পারবেন না । এই ২ বছর আপনি কিভাবে খরচ চালাবেন, সেটা ভেবে নিয়ে ঠিক রেখে ছাগল পালা উচিত ।
৯/ কর্মচারি দিয়ে ফার্ম চালাতে পারবেন না । সে আন্তরিক হবে না – ছাগল বাচাতে পারবেন না ।
১০ / ধৈর্য ধৈর্য ধৈর্য !!!
সামনে ইচ্ছে আছে – ইন্ডিয়ান ভরাই পদ্ধতিতে একটু ছাগল তৈরি করার ।
যা লিখলাম, এর সাথে অনেকেই দ্বিমত পোষন করতে পারেন । তাদের জন্য শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা – তবে ভুল করলেও নিজের সিদ্ধান্তেই করবো ।
আমাকে মহা জ্ঞানী ভাবার কোন কারন নাই, শিখছি মাত্র ।
লেখাটি ২০১৮ তে লেখা, জুলাই মাসেই ।
কিভাবে নতুন বিনিয়োগকারিরা আমাদের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ব্যাবহার করে বিনিয়োগ করতে পারবেন
আমাদের পরিকল্পনা ছিল, আমাদের সব হিসেব অনলাইন এ আনা আস্তে আস্তে । দেশে প্রচুর প্রতারনা হয়, টাকা নিয়ে ভেগে যাওয়ার মত ঘটনা হামেশাই ঘটে । আমরা এটা করতে চাই না, আমরা স্বচ্ছতার সাথে ব্যাবসা করতে চাই যা হালাল হবে আমাদের এবং আমাদের বিনিয়োগকারিদের জন্য । এটা একদিনে সম্ভব না,...