এক রাখাল, তার গাইকে চড়াতে দিয়ে গাছের ছায়ায় আরামেই বসেছিল ।
আধা মুর্খ সেই রাখালের কাছে এক সরকারি কৃষি কর্মকর্তা গেল এবং আলোচনা শুরু করল ।
সরকারি লোক জিজ্ঞেস করল – তোমার এই গরু কত লিটার দুধ দেয় ?
রাখাল – আমার পরিবারের জন্য যথেস্ট পরিমান ।
সরকারি লোকঃ তুমি কেন কৃত্রিম প্রজনন করতেছ না ? এতে করে ত তুমি ১৫/২০ লিটার দুধ পেতে পার !
রাখালঃ এতে করে আমার কি হবে ?
সরকারি লোকঃ তুমি আলাদা দুধ বাজারে বিক্রি করতে পারবা !
রাখালঃ এতে আমার লাভ কি ?
সরকারি লোকঃ তোমার আয় উন্নতি হবে । সেই টাকায় ভাল বীজ কিনতে পারবা, রাসায়নিক সার কিনতে পারবা, ফসল বেশি ফলাতে পারবা, ট্রাক্টর কিনতে পারবা !
রাখালঃ আয় উন্নতি দিয়ে কি হবে ?
সরকারি লোকঃ তুমি গাছের ছায়ায় নিশ্চিন্তে আরাম করতে পারবা !
রাখালঃ তো আমি এখন কি করছি ? এটা করার জন্য এত চক্কর কাটার কি দরকার !!
আসলে সব কৃষক এই কৃষকের মত বুদ্ধিমান নয় ।
ভারতের উত্তর প্রদেশ এর চাষী প্রেম সিং যখন ১৯৮৭ তে চাষের কাজে আসেন, তখন চারিদিকে এক হই চই শুরু হয়ে গিয়েছিল ।হইচই ছিল, ভাল বীজের, হাইব্রিড বীজের, রাসায়নিক সারের, ট্রাক্টর কেনার, উৎপাদন বাড়াও, অই সার দিলে ভরপুর ফলন এসব নিয়ে ।এর সাথে ছিল মেশিনারিজ কেনা, শ্যালো মেশিন কিনে মাটির নিচের পানি দিয়ে চাষাবাদ করা ।প্রেম সিং ৮৭-৯০ পর্যন্ত এই হইচই এ জড়িয়ে গিয়ে প্রচুর পরিশ্রম করা শুরু করে । হাড়ভাঙ্গা এই খাটুনি খাটার পরে, তিনি আগের ৩ বছরের হিসাব নিয়ে বসেন ।
৪ ভাই মিলে ৬০ একর জমিতে চাষাবাদ করতেন ।সারা বছরের হিসাবে দেখেন যে, গড়ে ২ লাখ রুপির ফসল উনারা বিক্রি করতে পারছেন ।
এই ২ লাখের মাঝে ৩২০০০ ছিল রাসায়নিক সারের খরচ,
৩০০০০ রুপি শ্রমিকের খরচ আর ট্রাক্টর এর ড্রাইভার এর বেতন,
১০০০০ রুপি বিদ্যুত বিল,
১০০০০ রুপি গরুর ঔষধ আর খাবারে,
৬০০০০ রুপি ট্রাক্টর এর কিস্তি পরিশোধে ।
সব খরচ বাদ দিয়ে সারা বছরে দেখা গেল লাভ হয়েছে ৩০০০০/৪০০০০ রুপি মাত্র ।
এই টাকায় ৪ ভাই এর যৌথ পরিবারের খরচ করার পরে দেখা গেল,
হাতে কিছুই নাই উলটা ঋন ।
এভাবেই চাষিরা ঋনের জালে সব সময় জড়িয়ে থাকে । উপমহাদেশের সব কৃষকের এই একই হাল ।নতুন চালু হওয়া এই চাষ পদ্ধতিতে এই ফলাফলই আসছে – কৃষক নিঃস্ব হয়ে গেছে, ঋনে জড়িয়েছে, ফলাফল – আত্নহত্যা ।
এর সাথে সাথে, আমাদের উপমহাদেশ এর জমির উর্বরতা কমেছে দিন দিন ।এর সাথে সাথে বাজারের সাথে, দামের সাথে কৃষকের টম এন্ড জেরি শো হয়েছে ।
ফসলের বাম্পার ফলন হলে দাম কমেছে, উৎপাদন খারাপ হলে দাম বেড়েছে – চাষি কিছুই পায়নি ।
*** *** *** *** *** ***
এই ফাদ থেকে বের হবার জন্য প্রেম সিং নতুন উপায় খুজেছেন, এরপরে গত ১৫ বছর হল নতুন চাষ আর পদ্ধতি নিয়ে কাজ করেছেন ।
উনার মডেল এ, উনি উনার জমিকে ৩ ভাগে ভাগ করেছেন –
*** ১ ভাগে উনি ফলের জন্য রেখেছেন ।
*** ১ ভাগে সবজি চাষ করেছেন যা নিজের পরিবারের জন্য ।
এই ২ ভাগে যা উৎপাদন হয়ে বেচে যাচ্ছে নিজের পরিবারের জন্য – সেটাকে প্রসেস করে পন্য বানিয়ে বিক্রি করছেন নিজেই । ফস্ল বাজারে বিক্রি না করে প্রসেস করে সেটাকে বাজারে দিলে সেখানে ভ্যালু অ্যাড হয়ে চাষি নিজে ভাল দাম পাচ্ছে । বাজারের জন্য ফসল উৎপাদন না করে, নিজের জন্য করার দিকে উনি জোর দিচ্ছেন । এবং সেটাকে প্রসেস করার মালিকানা থাকছে কৃষকের কাছে ।
*** ৩য় ভাগে উনি গরু পালছেন যা উনার সারের যোগান দিচ্ছে ।এই পদ্ধতিকে উনি বলছেন আবর্তনশীল ক্ষেতি ।
এই পদ্ধতিতে চাষিদের বাজার নির্ভরশীলতা কমে যাচ্ছে, কারন সে নিজেই নিজের দরকারের সব নিজের জমিতে উৎপাদন করে নিচ্ছে ।