অর্গানিক ব্রকলি চাষ করেছিলাম ।
কিভাবে করলাম সেই অভিজ্ঞতা নিয়েই এই লেখা ।
লেখাটি – ২০২০ এর ফেব্রুয়ারি মাসের ।
ঢাবি’তে প্রানিবিদ্যায় ২০০৩/২০০৪ সেশনে অনার্স এ ভর্তি হয়েছিলাম । কিন্তু ভাল না লাগায় সেখানে পড়া শেষ করিনি ১ম বর্ষ শেষ হবার পরে ।
ভদ্রলোকেরা এটাকে কায়দা করে ড্রপ আউট বলে ।
এরপরে নিজের চেস্টায় ওয়েব ডীজাইন শিখি ২০০৭ থেকে শেখা শুরু করেছিলাম । এরপরে অনলাইন এ অ্যাডসেন্স পাবলিশার হিসাবে কাজ করছি । সাথে ২০১১ তে ধানমন্ডী ১৫তে ভিতরে ছোট একটা অফিস নি্যে শুরু করে ভালই করছিলাম । ২০১৩ তে কাজ কমে যেতে শুরু করল ।
২০১৪ তে অনেক ভেবে দেখলাম আমি আসলে জীবন থেকে কি চাই ! ৯-রাত ৯ টা/১০ টা পর্যন্ত কাজ করে নিজের জন্য সময় পাই না । একটা বই পড়ার সময় পাই না । বউ এর সাথে পরামর্শ করে গ্রামে চলে এলাম । ঢাকায় ভাল লাগছিল না – গ্রামেই নেট পাচ্ছিলাম টেলিটকের ।
গ্রাম বলতে শহরতলী – বগুড়া মাঝিড়া ক্যান্টন্মেন্ট এর পাশেই আমাদের গ্রাম । আমাদের খু অল্প কিছু জমি আছে, চাষের জমি কিন্তু কিছু না করায় পড়েই ছিল । ২ বছর আগে থেকে কিছু ছাগল পালা শুরু করি অনলাইন এর কাজের পাশাপাশি । ১ বিঘা জমির কিছু অংশে ছাগলের ঘাস লাগিয়েছিলাম । এরপরে বেশিরভাগই পড়ে ছিল । সারাদিন যেহেতু অনলাইন এই থাকি, গত ২ বছরে অনেক ভিডীও দেখেছি – সেগুলোর কিছু কিছু পরিক্ষা করেছিলাম । হাইড্রোপনিক এ গমের ঘাস করে ছাগলকে খাইয়েছি ।
বাকি জমিতে ৪ মাস আগে ভাবলাম কিছু ফসল করি। কখনো কৃষি কাজ যেহেতু করিনি – পরামর্শ নিলাম আমাদের শহরের পাশের ম্যাক্সিম এগ্রোর আমিনুল ভাই এর কাছে । আমার ইচ্ছে ছিল ক্যাপ্সিকাম করা যায় কিনা । কিন্তু ভাই পরামর্শ দিলেন যেহেতু আমি নতুন – ক্যাপ্সিকাম আমার জন্য রিস্কি হয়ে যাবে মেইন্টেইন করা ।
আরেকটু পরাশোনা করে ব্রকলি করা সিদ্ধান্ত নিলাম – কারন এতে পোকা কম ধরে । গ্রামের কৃষকরা পরামর্শ দিলনে ১০ ভ্যান গোবর সার দিতে । আমি বেশি দিলাম – ২৫ ভ্যান । এরপরে এক্টূ বেশি দাম নিলেও, গ্রীন হাউজে করা কোকোপিট এর চারা নিয়ালাম ১ মাস বয়সী । এই সিদ্ধান্ত ভাল ছিল কারন আমার ৩/৪ টা ছাড়া কোণ চারাই মারা যায়নি । সব মিলিয়ে ১৮ শতাংশে ১৮০০ পিস লাগিয়েছিলাম । এরপরে নিড়ানি দিয়ে হয়েছে ১ বার ।
আমি অদক্ষ হওয়ায় কৃষকদের মত নিখুত যত্ন নিতে পারিনি । কাজ করার সময়ে এটা বুঝেছি -= কৃষক কত যত্ন আর কস্ট করে ফসল ফলায় ।
একেকটা গাছের পিছনে কত মায়া ।
দ্রুতই বড় হচ্ছিল চারা । মাঝে দেখি পাতা খেয়ে ফেলছে পোকায় – সন্দেহ করছিলাম পোকায় খেয়েছে । ৮০ টাকার কীটনাসক দিতে বল্ল বাজারের কীটনাশইক ব্যাবসায়ী ।
আমি অইটা না দিয়ে ৩৩০ টাকার ইন্দোনেশিয়ান জইব কীটনাশক নিয়ে এলাম । অলসতার কারনে ২/৩ দিনেও দেইনি । এর মাঝে একদিন দেখি জমিতে প্রচুর প্রজাপতি, এক জমি পরে পাশের জমিতে প্রতি সপ্তাহেই কীটনাশক দেয় – অইখানে নাই ।
আর এই প্রজাপতি আর পাতা খেতে প্রচুর পাখি আসে ক্ষেতে । ওরাই পাতা খেয়ে সাবাড় করছিল । বউ এর সাথে পরামর্শ করে দুজনে ঠিক করলাম – পাখিদেরও হক আছে । কিছু খাক, এরপরে যা পাই তাই নেব । আল্লাহর রহমত – পাতা কিছুটা খেয়ে ফেলার পরেও ব্রকলি অনেক ভাল হয়েছে ।
মাঝে সবাই চেপে ধরেছিল গ্রামের অভিজ্ঞ সব কৃষক – ইউরিয়া সার দিতে হবে । আমি বিকল কি দিলে ইউরিয়ার কাজ করবে সেটা খুজতে গিয়ে পেলাম সরিষার খৈল ৭ দিন ভিজিয়ে রখে দিলেই ইউরিয়ার কাজ হবে ।সব গাছের গোড়ায় অইটাই দিয়েছি । রিস্ক নিতে হয়েছে । মাঝে মনে হয়েছে যে হয়ত ফসল পাব না । কিন্তু চমৎকার হয়েছে এবং বাজারের অন্যান্য ব্রকলির চাইতে আমার গুলোর সাইজ বড় হয়েছে তবে কালার অত চকচকা হয়নি / চকচকা করারও কেমিক্যাল স্প্রে পাওয়া যায় ।
এখানে কি শিখলাম –
১/ অন্যদের চাইতে আমার সবজি ১ মাস বেশি সময় লেগেছে ।
২/ আমাদের আশেপাশেই কেমিক্যাল এর বিকল্প সার আর কীটনাশক আছে । এক্টূ পড়াশোনা আর মন স্থির করলেই আমাদের নিরাপদ সবজি করা সম্ভব ।
সাথে আছে মার্কেটীং এর বিষয় । এই সবজি যদি আমি বাজারে তুলি তাহলে দাম ভাল পাব না । আমি আমার পরিচিত লোকজনের মাঝেই এটা হোম ডেলিভারি করে বিক্রি করা শুরু করেছি । বগুড়ায় আমি ৪ পিস ব্রিকলি এক সেট হিসাবে বিক্রি করছি ভোক্তার কাছে – ৫০টাকা করে ২০০+ হোম ডেলিভারি ৩০টাকা । এক সেট ২৩০ করে বিক্রি করছি ।
এই শুক্রবার এ ২০০ পিস মানে ৫০ সেট ব্রকলি ঢাকায় নিয়ে গিয়ে হোম ডেলিভারি করব । ডেলিভারি সহ প্রতি সেট ৩০০ করে ।
এখানে – প্যাকিং, ডেলিভারি আর মার্কেটীং খুবই গুরুত্বপুর্ন । এটা করতে পারছি বলে আমার লাভ অনেক ভাল হবে ।
কৃষক পন্য উতপাদন করে কিন্তু তাতে কোন ভ্যালু অ্যাড করেনা ।
আর সবচেয়ে বড় লাভ হল, আমি খুব ভাল পন্য কাউকে দিতে পারছি – আত্নতৃপ্তি, আলহামদুলিল্লাহ ।
আমি ধরে রেখেছি ১৮০০ থেকে আমি ১০০০ পিস সেল করব । বাকিটা আত্নীয় স্বজন আর গ্রামের কৃষকদের খেতে দেব । আমার টার্গেট লাভ আমি করে ফেলছি । এটা যদি দিয়ে দেই – এরা খাবার পরে বুঝবে অর্গানিক করলে, স্বাদ কেমন আলাদা ।
অর্গানিক খাবার মুখে দিলেই বোঝা যায় – কোণ ল্যাব টেস্ট এর দরকার নাই – পার্থক্য একেবারেই আলাদা ।
চারা, গোবর সার, কামলা আর পানি সেচের খরচ মিলিয়ে আমার ১৪০০০ এর মত খরচ হয়েছে । আরেক্টূ কম হত হয়ত – আমার অনভিজ্ঞতার কারনে ১৫০০-২০০০ খরচ বেশি হয়েছে ।
আর এইসবের পিছনে একজনের হুমকি ধামকি খুব কাজে লেগেছে । আমার বউ ঘোষনা দিয়েছিল যদি সার দেই তাহলে আমাদের মেয়েকে (মেয়ে ত আমার একার না, আমাদের) সে ব্রকলি খেতে দেবেনা ।
আমার ঘাড়ে মাথা একটাই – বউ হুমকি দিলে, কিছু করার নাই ।
আর মেয়ের দিব্বি দিলে আমি ত এভারেস্ট এও চড়তে পারি ।
প্রশ্ন থাকলে করতে পারেন – তবে আমি কৃষক হিসাবে প্রায় অশিক্ষিত।
বোঝার ভুলের কারনে, তেমন একটা লাভ হয়নি এই প্রজেক্ট এ, তবে এখন করলে অবশ্যই লাভ হবে ।
এই যে কৃষি নিয়ে লিখি, অনেকেই মনে করেন আমি বিশাল বড় কিছু একজন ।
ভাই, আমি আসলে খুবই ক্ষুদ্র আর গরিব একজন – আমি অসাধারন কেউ নই । আমার একাডেমিক পড়াশোনায় আমি এইচএসসি পাস মাত্র । নিজে নিজে পড়াশোনার চেস্টা করি যা সামনে পাই – এইটুকু ছাড়া আমার তেমন কোন যোগ্যতা নাই ।
লেখাটি ২০১৯ এর এপ্রিলে লেখা।