২০১১ তে, ১লাখ ২০হাজার+ টাকার চাকুরি ছেড়ে গরুর খামার
শুরু করলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স এ পড়া এক বড় ভাই ।
ঢাকার পাশের জেলায় গড়ে তোলা এই খামারে প্রথম বছরে কোরবানির ঈদে বিক্রি করতে চাওয়া গরুতে ক্ষতিগ্রস্থ্য হলেন । পরের বছরেও একই অবস্থা ।
যেহেতু উচ্চ শিক্ষিত মানুশ, উনি কারন খোজা শুরু করলেন কেন তিনি ক্ষতির মুখে পড়ছেন । মূলত গরু মোটাতাজাকরন নিয়েই উনি কাজ করতেন ।
পরবর্তীতে উনি পড়াশোনা করলেন, ইন্ডিয়া এবং পাকিস্তান যেহেতু গরু এবং প্রানি সম্পদে অনেক এগিয়ে গিয়েছি তাদেরকে জানা এবং বোঝার চেস্টা করলেন ।
এতে করে ২০১৪ থেকে উনার লাভ হওয়া শুরু হল । শুধু কোরবানির ঈদ না, এখন সারা বছর কসাইদের কাছে গরু বিক্রি করেও উনি লাভে থাকেন ।
এই পুরো সময়ে উনাকে দেখে শেখার বা জানার চেস্টা আমারো ছিল । সময়ের সাথে সাথে পড়াশোণা থেকে জানা বিষয়গুলো খামারে পরিক্ষানিরিক্ষা করেছেন এবং সেই সফলতা উনাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে ।
উনার ভুল কি ছিল প্রথম দিকে ?
১/ আমাদের সারা দেশে গরু পালনের সাধারন নিয়ম হচ্ছে – গরুকে দানাদার খাওয়াও, কিন্তু এতে গরু কি পরিমান পুস্টি পাচ্ছে সেটা নিয়ে কেউ কোন পড়াশোণা করে না ।
২/ মাঝে ভারত গরু রফতানি বন্ধ করে দিলে, দেশে খামারিরা আগ্রহ সহকারে গরু পালন শুরু করে যা আমাদের দেশকে এখন প্রায় গরুতে স্বয়ংসম্পুর্ন করেছে । এতে করে দেশে দানাদার খাবারের চাহিদা বেড়ে গেছে । কাজেই অন্যসব খাতের মত এখানেও সিন্ডিকেট এবং দিন দিন দানাদার এর দাম বেড়েই যাচ্ছে । ভুট্টা ভাঙ্গা ২৫টাকা কেজি হয়ে যায় ৩২ টাকা কেজি । ভুষি হয়ে যায় ২৮ ঠাকা থেকে ৩৫টাকা ।
৩/ দানাদার নির্ভরতা গরু পালনের খরচ বাড়িয়ে দেয়, এছাড়াও কোরবানির বাজার খুবই অস্থিতিশীল । এ সময়ে ব্যাপারিরা সুদে টাকা তুলে বা নিজেদের মূল্ধন খাটিয়ে গ্রাম থেকে গরু কিনে ঢাকায় নিয়ে যায় । বাজারে গরু বেশি হয়ে গেলে দাম পড়ে যায় । আগে বোঝার উপায় নাই যে কি হবে । প্রায় জুয়া খেলার মত অবস্থা হয়ে যায় ।
৪/ কোরবানি ছাড়াই যারা সারা বছর গরু বিক্রি করেও লাভ করতে পারে, তারা কখনই ক্ষতির মুখে পড়ে না ।
৫/ গরু পালনের খরচ কমান এবং দানাদার নির্ভরতা কমিয়ে আনা একটি জরুরি বিষয় । কিন্তু দানাদার না খাইয়ে গরু মোটাতাজা করা সম্ভব কি ?
আমাদের দেশে সাধারনত দানাদার খাইয়ে, সাথে ঘাস এবং খড় খাইয়ে গরু পালন করা হয় ।
সাথে অনেকেই ফার্মেন্টেড কর্ন খাওয়াই যার পুস্টিমান ভাল । কিন্তু ফার্মেন্টেড কর্নেও দানাদার মেশাতেই হয় ।
তাহলে, পাকিস্তানিরা বা পাঞ্জাবের বড় বড় খামারে কি করে ?
তারা সাইলেজ খাওয়াই সাথে হে করে রাখে সারা বছরের ।
খাবার খামারে থাকলে, ম্যানেজমেন্ট খরচ কমে আসে ।
বাজারে দানাদার কমা বাড়ার সাথে খামারের খরচ নির্ভরশীল না হওয়ায় অন্যদের চাইতে গরু পালনে খরচ কমে আসে ।
এছাড়া টিএমআর – মানে টোটাল মিক্সড রেশন আরেক ধারনা আছে । গরু প্রতি ওজন হিসাব করে তাকে সুষম খাবার নির্দিস্ট অনুপাতে খাওয়ানো হয় । এটাও ম্যানেজমেন্ট খরচ কমিয়ে আনে – প্রতিদিন ঘাস খাওয়ানর জন্য কাটা, প্রসেস করার দরকার পড়ে না ।
রাফেজ বেইজড এই প্রক্রিয়া, সঠিকভাবে করতে পারলে গরু প্রতি পালনের খরচ কমে আসে । এবং এভাবে গরু প্রতি দিনে ৮০০/১০০০ গ্রাম ওজন বৃদ্ধি সম্ভব হয় ।
এখানে প্রশ্ন আসে সাইলেজ কি ?
ইউটিউবে অনেক ভিডিও আছে, দেখলেই সহজেই বোঝা যায় । সংক্ষেপে – ভুট্টা গাছ যখন ভুট্টা ফলে চাপ দিলে সাদা আঠার মত বের হয় একে মিল্কিং স্টেজ বলে । এই ভুট্টা গাছকে ১ ইঞ্চি সাইজে কেটে, এর সাথে মলাসেস (আখের তরল গুড়) সেটাকে বায়োরোধি বস্তায়, বা মাটিকে চারকোনা গর্ত করে সেখানে পলিথিন বিছিয়ে পুরো এয়ারটাইট করে রাখা হয় ।
খুব ভালভাবে চাপিয়ে রাখতে হয় এবং চারপাশে আর উপরেও পলিথিন দিয়ে মাটী চাপা দিতে হয় যেন বাতাস ঢুকতে না পারে । ৪৫ দিন পরে এটীকে এক পাশ থেকে প্রতিদিন প্রয়োজনমত বের করে গরুকে খাওয়ান যায় । এতে করে গরু এই খাবার সহজে হজম করতে পারে, ভাল পুস্টী পায় । এখানে থাকা ভুট্টা দানাদার এর অভাব অনেকটাই পূরন করে ।
হে – মানে হল খেসারি ডাল এর গাছ শুকিয়ে রাখা যায় যা উৎকৃষ্ট মানের প্রোটিন সোর্স গরুর জন্য ।
গরু মোটাতাজাকরনে, ভাল দামে গরু কেনাটাও জরুরি । ছোট গরু, বা বড় গরুর ক্ষেত্রে, আলাদা আলাদা কৌশলগ্রহন করা জরুরি ।
বড় গরুর ক্ষেত্রে, গরুর ভাল ফ্রেম সহ ঢিলা চামড়ার শুকণো গরু কিনে নেয়া ভাল । যাকে কৃমিমুক্ত করে ৪ মাস পেলে বাজারে বিক্রি উপযোগি করা ভাল ।
আবার কেউ কেউ ১ বছরও পালন করেন বা ৬ মাস । এটা যার যার কৌশল হতে পারে ।
সারা দেশে, কোন হাটে কখন ভাল গরু পাওয়া যায় এটা জানাও জরুরি ।
শেখার শেষ নেই, মন উদার করে প্রচুর শিখতে হবে, জানতে হবে ।
গরুর শেড বানানো উচিত নাকি খোলা যায়গায় পালা উচিত এটা নিয়েও জানা দরকার ।
প্রচলিত ধারনা গরুর শেড বানিয়ে বেধে পালা যা সঠিক না ।
এটা নিয়ে অন্য একদিন আলোচনা করা যাবে ।