ক্যান্সার ট্রেন এবং আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা

পাঞ্জাবে একটা ট্রেন আছে যার নামই ক্যান্সার ট্রেন – যে ট্রেন ক্যান্সার হাপাতালের জন্য রোগি নিয়ে যায় ।

এই ট্রেন যাত্রিদের ৫০% লোক ক্যান্সার আক্রান্ত ।পাঞ্জাব এর ভাটিন্ডা থেকে রাজস্থানের বিকানর এর ক্যান্সার হসপিটাল পর্যন্ত এই ট্রেন যাতায়াত করে । কিন্তু কেন পাঞ্জাব থেকেই এই ট্রেন যায় ?

Cancer train

পাঞ্জাবেই এত ক্যান্সার রোগি কেন ?

এই প্রশ্নের উত্তর পোস্টের মাঝামাঝিতে দিচ্ছি, এর আগে আলোচনা করা যাক সবুজ বিপ্লব নিয়ে ।নর্মান বর্লাগ নামের এক ব্যাক্তি ১৯১৪ সালে জন্মগ্রহন করেন যিন এই সবুজ বিপ্লব ধারনা জন্ম দেন । ১৯৩০ দশকের আমেরিকার মহা মন্দার সময়ে মিনেসোটায় খাবারের দাম নিয়ে আন্দোলন দেখে তার মাথায় চিন্তা আসে খাবার নিয়ে ।

১৯৪২ এ প্লান্ট ফিজিওলজি নিয়ে পিএইডি করে তিনি মেক্সিকোয় যান কাজে করতে ।মেক্সিকোতে সেসময়ে কিছু ফসল এর রোগ আর খুবই কম উতপাদন দেখে তিনি এটা নিয়ে কাজ করা শুরু করেন ।সেখানে গমের উপরে তিনি পরিক্ষা নিরিক্ষা করেন এবং সিলেক্টিভ মডেল এবং বায়োটেকনোলজি নিয়ে । যে জাত গুলো ফাঙ্গাস এবং রোগ প্রতিরোধি সেগুলোকে নিয়ে ফসল ফলানর চেস্টা করেন।৩ বছর, মাত্র ৩ বছরেই এখানে সফলতা আসে । সাথে সাথে এই জাতগুলো রাসায়নিক সারের প্রয়োগে আরো ভাল ফল দেয়া শুরু করে । ফসল এতই ভাল হওয়া শুরু করে যে গাছ গুলো মাথার দিকের ফলের ভারে মাটিতে পড়ে যাওয়া শুরু করে ।এটা ঠেকাতে আবার সিলেক্টিভ উপায়ে জাপান থেকে নিয়ে আসা গমের বীজ যেগুলো খাটো আর শক্তিশালি সেগুলো নিয়ে কাজ শুরু করেন । ফলন আরো বেড়ে যায় এতে ।

এটা এতই বেশি উতপাদন করা শুরু করে যে, ১৯৫৩ সালে শুরু করা প্রজেক্ট এর কারনে, মেক্সিকোর খাবারের সমাধান হবার পরেও তারা রফতানি করা শুরু করে ১৯৬৩ সালেই ।

এই সাফল্য পাকিস্তান এবং ইন্ডিয়াতেও প্রভাব ফেলে এবং এখানেও একই উপায়ে ফসল ফলানো শুরু হয় । পাকিস্তান ১৯৬৫ তে ৫ মিলিয়ন টনকে ১৯৭০ এ ৮ মিলিয়ন টনে নিয়ে যায় ।এই পরিক্ষার সময়ে খেয়াল রাখা হল যেন নতুন জাতগুলো কীটনাশক, সার সহনশীল হয় । ফসলে কীটনাশক দিয়ে পোকার আক্রমন কমিয়ে ফেলায় আর সার দেয়ায় ফলন বৃদ্ধির হারছিল অস্বাভাবিক রকমের ভাল । ফলন প্রায় ৩ গুন বেড়ে যায় এভাবে ১৯৯০ সালের ভিতরেই ।

খুব ভাল শোনাচ্ছে তাই না ?

পর্দার অন্যপাশে তাকাই আসেন ।

এই সবুজ বিপ্লবের আড়ালে নতুন এক বিশাল ব্যাবসা দাঁড়িয়েছে, সার আর কীটনাশক এর ব্যাবসা ।নতুন জাতের এসব ফসলে পানি লাগে অনেক বেশি, সাথে সাথে সার লাগে বেশি । রাসায়নিক এসব সারের কারনে, পৃথিবীর সামগ্রিক ইকো সিস্টেম আজ হুমকির মুখে । সবুজ বিপ্লব পশ্চিমা পরিকলনার একটু অংশ মাত্র ।এই যে সার আর কীটনাশক – এটার ফলে আমাদের দেশীয় অনেক প্রজাতি আজ প্রায় নাই হয়ে গেছে ।

৯০ এর দশকেও দেশি মাছ পাওয়া যেত ধান ক্ষেত এ । এখনকার কীটনাশকের কারনে মাছ নেই, জমি গুলোও বিষাক্ত হয়ে গেছে ।উতপাদন খরচ বেড়ে গেছে । শুধু ভারতেই এখন প্রতি বছর ১২০০০ কৃষক আত্নহত্যা করে সবুজ বিপ্লবের ফাদের কারনে । অতিলোভের কারনে উচ্চ খরচে উৎপাদন করা ফসলে যখন দাম পায় না কৃষক, তখন দাদন ব্যাবসায়িদের সুদের টাকা পরিশোধে ব্যার্থ কৃষক তার কাছে থাকা টাকায় জীবনের শেষ কীটনাশক কিনে খেয়ে নেয় নিজেই ।

এই রাসায়নিক কৃষির কারনে স্ব্যাস্থ্যগত যেসব ঝুকির মাঝে আমরা পড়ছি, সেটা ভয়াবহ ।

এরপরে আসে জেনেটিক্যালি মডিফায়েড অর্গানিজম ফুডস – আরো বেশি উতপাদন,আরো বড় ফাদ ।

ধরা যাক, আপনি সরিষা লাগাবেন আপনার জমিতে । আপনি বাধ্য হলেন মনসান্টো নামক এক ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির বীজ কিনতে, মানে তাদের কাছে থেকেই আপনাকে বীজ কিনতে হবে । আপনার নিজের কাছে আপনি বিজ সংরক্ষন করতে পারবেন না । যদি আপনার কাছে কোন বীজ পাওয়া যায় তাহলে আপনার বাড়িতে পুলিশ আসবে, আপনাকে ধরে নিয়ে যাবে বিজ সংরক্ষন করার অপরাধে । কারন, এই বিজের পেটেন্ট মনসান্টো কোম্পানির । আপনাকে হয় জেলে যেতে হবে অথবা বড় অংকের জরিমানা দিয়ে ছাড়া পেতে হবে ।

রুপকথা মনে হচ্ছে ? আমেরিকাতে এখন এই নিয়ম চলছে ।

আমাদের দেশে এখন বিটি বেগুন নামের এক বেগুন আসছে । এই বেগুনে পোকা ধরবে না, অনেক ভাল ফলন হবে । আমেরিকার কর্নেল ইউনিভার্টির প্রজেক্ট এ বাংলাদেশে ফার্মিং ফিউচার বিডি নামক এক কোম্পানি বিটি বেগুন প্রোমোট করতেছে আমাদের দেশে ।এই বেগুনের বিজ আপনাকে কিনতে হবে তাদের কাছে থেকে । এখনো পেটেন্ট এর প্র্যোগ শুরু হয়নি, কিন্তু আগে ত মাঠ দখল করে মনোপলি করতে হবে তাই না ? তারপরে কোন এক শুভদিনে, তারা ঘোষনা দেবে – তাদের অনুমোদিত বীজ ছাড়া কেউ নিজেরাবিজ সংরক্ষন করতে পারবে না ।

আমাদের কৃষিতে সাহায্য করার চেহারা নিয়ে এই ভালমানুশি চেহারার কোম্পানির পিছনে কারা – এটা বুঝতে কস্ট হয় না । তাদের করা একটি ভিডিও কমেন্ট এ দিচ্ছি – দেখেন ।পাঞ্জাবে যেসব কৃষক আত্নহত্যা করছে, তাদের নিয়ে খোজ নিয়ে জানা গেছে সব খানেই বিটি ব্রান্ড ।জিএমও ফুড আরো ভয়াবহ ফলাফল নিয়ে আসতেছে । আমেরিকাতে এখন ৯০% ফসল এই উপায়ে ফলানো হয় । এই উপায়ে ফলানো গো-খাদ্যও বিষাক্ত । ক্যান্সার, অ্যালার্জি, অকাল গর্ভপাত, মানসিক ভারসাম্যহীন বাচ্চা এসবের মূল এসব ফফলের গ্লাইফোসেট ।

আরেকটা পয়েন্ট – এসব ফসলের পরাগায়ন এর জন্য মৌমাছি ঠিকভাবে মধু সংগ্রহ করতে পারে না – যার কারনে মৌমাছি এবং ইকো সিস্টেম এর অনেক পোকা, প্রানি মারা যাচ্ছে ক্ষুধায় । আর মৌমাছি না থাকলে কি আমাদের পুরো মানব্জাতি কি পরিমান হুমকির মুখে পড়বে সেটা চিন্তা করাও সম্ভব না ।

রাজস্থানে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক কৃষকদের আখ উতপাদনের জন্য মাথায় হাত দিয়ে বুঝিয়েছে । আখ উতপাদনে পানি বেশি লাগে, পানি দেয়ার জন্য ডিপ টিউবওয়েল দরকার । আর এই ফসলফলানর জন্য কেমিকেল দরকার । এই কেমিক্যাল পানিতে মিশে যাচ্ছে । এভাবে আমাদের নদি, পানি সব দুষিত হয়ে যাচ্ছে কেমিক্যাল এ ।এতে করে যে রোগ হচ্ছে যেমন- ক্যান্সার, অ্যালার্জি, অকাল গর্ভপাত, মানসিক ভারসাম্যহীন বাচ্চা সেগুলোর সমাধান করার জন্য আরো ঋন নিচ্ছে আমাদের দেশ ।

৯০ দশকের আগে বাংলাদেশে ক্যান্সার শব্দটা ছিল না ।

আমাদের দেশে সবুজ বিপ্লব মানে রাসায়নিক কৃষি শুরু হয়েছিল ৮০ এর দশকেই ।

ভারতের পাঞ্জাবে যা ৬০ এর দশকে শুরু হয়েছিল । বর্তমানে পুরো পাঞ্জাব রাসায়নিক কৃষির উপর দাঁড়িয়ে আছে । এই রসায়নিক কৃষির ফলাফল – ক্যান্সার ট্রেন ।

রাজস্থানে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক কুয়ো বাদ দিয়ে ডিপ টিউবওয়েল প্রচলন করে যা ডিজেল বা বিদ্যুতে চলে । এজন্য তারা ঋন দিয়েছে ।সাথে শর্ত দিয়েছে যে আখ চাষ করতে হবে কারন এটা সরাসরি টাকা দেবে, অন্য যে ফসল তার ফলাত সেটা তারা খায় । আগেতারা অল্প পানিতেই যেসব ফসল ফলাত সেই ফসল তার দেয়া ঋন পরিশোধ করে না ।একটি প্রবাহমান নদি ওয়ার্ল্ড ব্যাংককে টাকা দেয় না । বাধ টাকা দেয় তার দেয়া ঋন পরিশোধ করার জন্য । বাধ বানানর জন্য ঋন নিতে হয়, নতুন সেচ প্রকল্প বানালে ঋন নিতে হয় । সেখানে নতুন নতুন ফসল চাষ করা যায় যে ফসল এর বীজ তাদের অনুদান পাওয়া বীজ কোম্পানি বিক্রি করে । তারা উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়নের জন্য টাকা ঋন দেয়, সেখানে সবুজ বিপ্লব ঘটায় । এরপরে সেখানে যখন মানুশ রোগে ভুগতে শুরু করে তখন আরো ঋন দেয় চিকিতসা খাতে । সেখানে মেডিসিন বানানর সরঞ্জাম বানানর মেশিন দেয়, রাসায়নিক দেয় । উন্নয়নশীল দেশ সেই ঋন শোধ করে ।

আমরা – জনগন হয়ে যাই তাদের গিনিপিগ ।

ওয়ার্ল্ড ব্যাংক চায় তার ঋন পরিশোধ হোক, এটাই তাদের আসল উদ্দেশ্য ।

কিভাবে নতুন বিনিয়োগকারিরা আমাদের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ব্যাবহার করে বিনিয়োগ করতে পারবেন

কিভাবে নতুন বিনিয়োগকারিরা আমাদের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ব্যাবহার করে বিনিয়োগ করতে পারবেন

আমাদের পরিকল্পনা ছিল, আমাদের সব হিসেব অনলাইন এ আনা আস্তে আস্তে । দেশে প্রচুর প্রতারনা হয়, টাকা নিয়ে ভেগে যাওয়ার মত ঘটনা হামেশাই ঘটে । আমরা এটা করতে চাই না, আমরা স্বচ্ছতার সাথে ব্যাবসা করতে চাই যা হালাল হবে আমাদের এবং আমাদের বিনিয়োগকারিদের জন্য । এটা একদিনে সম্ভব না,...

আবর্তনশীল ক্ষেতি পদ্ধতি

আবর্তনশীল ক্ষেতি পদ্ধতি

এক রাখাল, তার গাইকে চড়াতে দিয়ে গাছের ছায়ায় আরামেই বসেছিল । আধা মুর্খ সেই রাখালের কাছে এক সরকারি কৃষি কর্মকর্তা গেল এবং আলোচনা শুরু করল ।সরকারি লোক জিজ্ঞেস করল - তোমার এই গরু কত লিটার দুধ দেয় ?রাখাল - আমার পরিবারের জন্য যথেস্ট পরিমান ।সরকারি লোকঃ তুমি কেন কৃত্রিম...

কিউবা বিশাল বিপদে পড়ে গিয়েছিল ।

কিউবা বিশাল বিপদে পড়ে গিয়েছিল ।

সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাবার পরে - কিউবা বিশাল বিপদে পড়ে গিয়েছিল । কোল্ড ওয়ার এর সময়ে কিউবাকে দেয়া সোভিয়েত সাহায্য বন্ধ হয়ে যায় ।এই সাহায্যের মাঝে ছিল কৃষি যন্ত্রপাতি, সার, ট্রাক্টর । যে কারনে, যন্ত্র নির্ভর এবং কেমিকেল সার নির্ভর কিউবার কৃষি উতপাদন ব্যাপক...